শেষ মুহূর্তেও থেমে নেই আওয়ামী লীগের মহামূল্যবান দলীয় প্রতীক নৌকা পেতে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। সব প্রার্থীর সব ধরণের চেষ্টা-তদ্বিরে এখন একটাই আলোচনা বিষয়- কে পাচ্ছেন দলীয় প্রতীক নৌকা।
দলের বিভিন্ন সূত্র থেকে সবশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ইতিমধ্যেই নালিতাবাড়ী উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন নিয়ে পর্যালোচনা হয়েছে। ওই পর্যালোচনায় প্রার্থীদের অতীত রাজনৈতিক কর্মকান্ডসহ সব খুঁটিনাটি বিষয় উঠে এসেছে নিরপেক্ষভাবে। ফলে অনেক ইউনিয়নে পুরনোরা থেকে গেলেও কিছু কিছু ইউনিয়নে চমক নিয়ে আসতে পারেন একেবারেই নতুন মুখ।
তথ্য অনুযায়ী…
১ নং পোড়াগাঁও ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি হয়েছেন মোট ৯ জন। এরমধ্যে গেল নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয় বারের মতো বিজয়ী চেয়ারম্যান আজাদ মিয়া মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। গেল নির্বাচন পরবর্তী কিছুদিন পর্যন্ত আজাদ মিয়ার দলীয় কোন সদস্য পদ পর্যন্ত ছিল না। তবে ফলে কাগজে-কলমে তাকে বিদ্রোহী বলা না গেলেও আওয়ামী ঘরানার হওয়ায় তাকে বিদ্রোহী হিসেবে এনে শেষ পর্যন্ত গণ্য করা হয় কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সেক্ষেত্রে কোন কারণে আজাদ মিয়া দলীয় মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়লে তারই ভাতিজা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মুরাদ মিয়া দলীয় প্রার্থী হতে পারেন।
২ নং নন্নী ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য বিল্লাল হোসেন চৌধুরীর দলীয় মনোনয়ন বলাচলে শতভাগ নিশ্চিত। এখানে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি হয়েছেন মোট ৭ জন।
৩ নং রাজনগর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি হয়েছেন মোট ১২ জন। হাইকমান্ডের পরামর্শে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ বকুল প্রার্থী না হওয়ায় এখানে উপযুক্ত প্রার্থীর সংকট রয়েছে। তবে নানা প্রেক্ষাপটে শেষ পর্যন্ত বর্তমান চেয়ারম্যান এর ছোট ভাই ইসমাইল হোসেনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলে সম্ভাবনা জেগে উঠেছে।
৪ নং নয়াবিল ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি হয়েছেন মোট ৫ জন। এরমধ্যে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ডাঃ নূর ইসলাম দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন- এটি একপ্রকার নিশ্চিত করেই বলা যায়।
৫ নং রামচন্দ্রকুড়ায় বর্তমান চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম খোকার দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের হওয়া সত্বেও গেল নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় তাকে বেগ পেতে হতে পারে। কোন কারণে খোকা দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হলে সেক্ষেত্রে উপজেলা যুবলীগের সদস্য হাফিজুল ইসলাম জুয়েল দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি হয়েছেন মোট ৬ জন প্রার্থী।
৬ নং কাকরকান্দি ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশির সংখ্যা ৫ জন। এখানে বর্তমান ও টানা দুইবারের চেয়ারম্যান শহীদ উল্লাহ তালুকদার মুকুল পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন- এ বিষয়টি প্রায় শতভাগ নিশ্চিত।
৭ নং নালিতাবাড়ী ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি হয়েছেন মোট ৫ জন। এরমধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাস্টারের পুনরায় দলীয় মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত।
৮ নং রূপনারায়নকুড়ায় দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি হয়েছেন মোট ৬ জন। এরমধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম মোস্তফা কামাল দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। তবে বিগত পাঁচ বছরের রাজনৈতিক কর্মকান্ড পর্যালোচনায় এখনও পর্যন্ত বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।
৯ নং মরিচপুরান ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি হয়েছেন মোট ৬ জন। এরমধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষক লীগের আহবায়ক খন্দকার শফিকুল ইসলামের দলীয় মনোনয়ন বলাচলে নিশ্চিত। এক্ষেত্রে তাকে ঘিরে ব্যক্তিগত নানা বিতর্ক উঠলেও দলের আনুগত্য, আবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং নিজের ভোটকেন্দ্রে একচ্ছত্র আধিপত্য ছাড়াও পার্শ্ববর্তী উত্তর কোন্নগড় কেন্দ্রেও তার অবস্থান অপেক্ষাকৃত ভালো হওয়ায় তিনি এগিয়ে রয়েছেন। অন্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে নিজস্ব বলয়ের কোন ভোটকেন্দ্র না থাকাসহ রাজনৈতিক নানা কারণ দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে।
১০ নং যোগানিয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল লতিফের মনোনয়ন বলাচলে নিশ্চিত। যদিও শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান সেতু দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশির সংখ্যা ৯ জন।
১১ নং বাঘবেড় ইউনিয়নে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি প্রভাষক মতিউর রহমান ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হওয়ায় দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। যদিও এখনও পর্যন্ত বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সবুরের বিষয়টি সম্ভাবনাময়। এখানে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশির সংখ্যা ১২ জন।
১২ নং কলসপাড় ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশির সংখ্যা ১১ জন। তবে দলীয় ও অন্যান্য দিক বিবেচনায় উপযুক্ত প্রার্থীর সংকটে মন্দের ভালো হিসেবে বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন- এটি একপ্রকার নিশ্চিত।
উপরোক্ত বিষয়টি দলের বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত কিছু ব্যতিক্রম হলে হতেও পারে। যদিও তা খুব একটা সম্ভাবনা নেই।
উল্লেখিত প্রার্থীদের বিপরীতে যারা রয়েছেন, তাদের অনেকে মাঠে তুলমানামূলক জনপ্রিয় বা শক্তিশালী প্রার্থী হলেও বিগত দিনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড তথা এক্টিভিটি কারও ক্ষেত্রে দূর্বল কেউ বা বিতর্কিত হওয়ায় মনোনয়ন প্রাপ্তির সম্ভাবনা থেকে দূরে পড়ে যাচ্ছেন। আবার কাউকে নিয়ে জনপ্রিয়তার সংকট থাকলেও দলীয় কর্মকান্ডের মূল্যায়নে বিশ্বস্ত ও আনুগত্য হওয়ায় এগিয়ে রয়েছেন।

