নগর দুর্ভোগের চরমে আছে এমন একটি এলাকা রাজধানীর মিরপুরের মনিপুরের বাসিন্দারা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৩নম্বর ওয়ার্ডের বেগম রোকেয়া সরণি লাগোয়া পশ্চিম পাশের এলাকা এটি। বিগত কয়েক বছর ধরে জলাবদ্ধতা নিত্যদিনের সঙ্গি এখানকার বাসিন্দাদের। শুধু বৃষ্টিতেই নয়, যেকোনো ছুটির দিন শুষ্ক অবস্থাতেও বাসাবাড়ির বাড়তি পানি খরচের কারণে রাস্তায় পানি জমে যায় হাঁটু পর্যন্ত। এমন দৃশ্য দেশের অন্যকোথাও মিলবে কিনা তা নিয়ে ঢের সংশয় রয়েছে এখানকার বাসিন্দাদের। এলাকার মানুষদের চরম কটাক্ষ করেও বলতে শোনা যায়, ‘আল্লাহর কি রহমত, মনিপুরে বৃষ্টি ছাড়াই শরবত’।
অনেকে বাসা-বাড়ি ছাড়েছেন বহু আগেই। প্রতিমাসেই ঘরভাড়া হওয়া নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় বাড়িওয়ালাদের। লক্ষাধিক মানুষের বসবাস এ ওয়ার্ডে। রোকেয়া সরণি ঘেঁষা এলাকাটির বাসিন্দাদের প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয় রাস্তাটি দিয়ে। কিন্তু স্থায়ী রূপ নেয়া জলাবদ্ধতায় নিদারুণ কষ্টে আছে এলাকাবাসী। দুর্ভোগের অন্ত নেই তাদের।
এখানেই রয়েছে স্বনামধন্য স্কুল মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল শাখা। যেখানে দুই শিফটে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক যাতায়াত করে থাকেন এ রাস্তা দিয়েই। মিরপুর দুই নম্বর, ১০ নম্বর ও কাজীপাড়ার ঠিক মাঝখানের এ এলাকা কতটা দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে তা চোখে না দেখলে বোঝা দায়।
এলাকাবাসী মনে করেন, নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলামের সুদৃষ্টি ফেরাতে পারে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভাগ্য। দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করবেন তিনি, এমনটা ধারণা এখানকার বাসিন্দাদের।
এদিকে, অভিযোগ রয়েছে বিগত সময়ের কাউন্সিলর হারুনুর রশীদ মিঠুর কাছে বারবার এলাকার বাসিন্দারা জলবদ্ধতা নিরসনে দাবি জানালেও তার কোনো প্রতিকার করেননি তিনি। এমনকি তৎকালীন মেয়রের (আতিকুল ইসলাম-প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার সময়) দফতর থেকে যোগাযোগ করা হলেও ব্যবস্থা নেননি মিঠু। যার খেসারত তাকে দিতে হয়েছে এ বছরের ৩০ জানুয়ারির সিটি নির্বাচনে। দীর্ঘদিন কাউন্সিলর থাকার পরও বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হতে হয়েছে মিঠুকে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও নির্বাচিত হয়েছেন এ ওয়ার্ডের মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইসমাইল হোসেন মোল্লা।
নব নির্বাচিত কাউন্সিলরের কাছে জানতে চাওয়া হয় সমাধান মিলবে কীভাবে? উত্তরে ইসমাইল মোল্লা জানান, এলাকাটির পানি নেমে যাওয়ার গেটওয়ে বা সুয়ারেজের পানি নিষ্কাষণের সংযোগ ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি গত দশ বছরে কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় বৃষ্টি ও জলবদ্ধতায় রাস্তার অবস্থা বেহাল হয়েছে, উপযোগিতা হারিয়েছে চলাচলের। সেখানে জলাবদ্ধতা হবে এটাই স্বাভাবিক। বলছিলেন কাউন্সিলর ইসমাইল। তিনি মনে করেন নতুন অর্থবছরের বাজেট থেকে গতানুগতিক নয় বিশেষ বরাদ্ধের ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বিশেষ বিবেচনায় কাজ করতে পারলেই সমাধান সম্ভব। এজন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দিকে তিনি তাকিয়ে আছেন বলে জানান এই কাউন্সিলর।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে ঢাকা উত্তরের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনা. মুহম্মদ আমিরুল ইসলাম জানান, সুয়ারেজের সংযোগ লাইন করে দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে ওয়াসার সাথে কয়েকদফা মিটিং করেছে সিটি করপোরেশন। এমনকি পূর্ব মনিপুরের জলবদ্ধতা নিরসনে বেগম রোকেয়া সরণির সঙ্গে বন্ধ থাকা ড্রেনেজ ব্যবস্থাটি পুনরায় খুলে দিতে কাজ শুরু করেছেন তারা।
বিশেষ বরাদ্দের বিষয়ে আমিরুল ইসলাম বলেন, করপোরেশনের অধীনে প্রত্যেক কাউন্সিলরকে আগামী ৫ বছরের উন্নয়ন কাজের তালিকা দিতে বলা হয়েছে। এমনকি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমস্যাগুলোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে কাউন্সিলরদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেখান থেকেই মূলত ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা হবে বল জানান করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম।

